একাত্তরের পূর্বাপর করাচিতে বাঙালির সংগ্রাম

৳ 800.00

‘একাত্তরের পূর্বাপর : করাচিতে বাঙালির সংগ্রাম’ লেখা, ছবি, দলিল ও পরিশিষ্টে এটি একটি ইতিহাসাশ্রয়ী প্রামাণ্য গ্রন্থ। ১৯৪৭-এ ব্রিটিশদের ভারতভাগ, দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টি এবং যোজন যোজন দূরত্বে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানকেন্দ্রিক রাষ্ট্রচিন্তার যে ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক দ্বিচারিতা তারই কোপানলে পড়েছিল একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি জাতীয়তাবোধ এবং রাজনৈতিক সমাজ বাস্তবতা । শোষণ-শাসন, বঞ্চনা-বৈষম্যে বাঙালির জীবনসংগ্রাম তখন পূর্ব-পশ্চিমে ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছিল । বিশ্ব মানচিত্রে মুক্তিযুদ্ধ সেই দৃশ্যপটকে আমূল বদলে দিয়েছে, বাংলাদেশ জন্ম নিয়েছে, বাঙালি স্বাধীন হয়েছে, পূর্ব-পশ্চিম বিলুপ্ত হয়েছে । তবে একাত্তর-পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাদেশের মানুষের সেই সময়ের সংগ্রামমুখর জীবন বিস্মৃত হওয়ার নয় । করাচিতে জীবনের অনেকটা সময় পার করা বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বইটিতে লিখেছেন শিক্ষা ও পেশাগত কারণে সেখানেই থাকা আরো অনেকে। করাচিতে তাদের অনেকেই একত্রিত হয়েছিলেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র সমিতি (পূবাছাস) সংগঠনে, পরে দেশে ফিরে যারা গড়ে তোলেন করাচি ইউনিভার্সিটি এক্স-স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (কুয়েকসাব) নামের সংগঠন। বইটির অনেক নিবন্ধই বিভিন্ন সময় কুয়েকসাব-এর সংকলনে প্রকাশিত হয়েছে। পঞ্চাশ-ষাট দশকে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের করাচিকেন্দ্রিক বাঙালিদের শিক্ষা-কর্মসংস্থান, জীবনযাপন ও জীবনধারণ তথা সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কার্যক্রমের নানা প্রসঙ্গ বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে। এতে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত করাচিতে যাওয়া বাঙালিদের জীবনসংগ্রামের কথা যেমন রয়েছে তেমনি এসেছে ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে বাঙালি ছাত্র ও পেশাজীবীদের তৎপরতার নানা বিষয় । অনেকের থাকলেও এদের বেশিরভাগেরই ছিল না কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ বা সম্পৃক্ততা । তবু বাস্তবতা, শোষণ-শাসন ও বঞ্চনার কশাঘাতে সাধারণরাও ছুটে গেছেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে, জড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশ সৃষ্টির রাজনৈতিক সংগ্রামের সঙ্গে।

এভাবে স্বাধীনতার প্রশ্নে তারাও সংগঠিত হয়েছেন, ভূমিকা রেখেছেন পরাধীন ভূখণ্ডে থেকেও সোচ্চার হয়ে। এভাবেই হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক, আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে শলা-কৌশল ও তাঁর। নির্দেশ-নির্দেশনায় কর্মসূচি পালন ও মুক্তিযুদ্ধ প্রস্তুতির কথা। আলোচনা হয়েছে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে ও। সেভাবে করাচিতে মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব এবং যুদ্ধ শুরু ও শেষের আটকে পড়া জীবন এবং বাংলাদেশের বিজয় ও পাকিস্তানের পরাজয়ের পর বাঙালিদের ওপর নেমে আসা অভিঘাতের কথাও বর্ণিত হয়েছে। এসেছে বাঙালি ছাত্র ও পেশাজীবীদের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার সংগ্রামমুখর বিবরণও। পাশাপাশি বর্ণিত হয়েছে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালিদের অংশগ্রহণ এবং আপ্রতিষ্ঠার অভিঘাত ও ব্যক্তিক অবস্থান-চরিত্র এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতার কথা। এ প্রেক্ষাপটে এসেছে করাচি প্রবাসীদের ওপর বঙ্গবন্ধু ও ভাসানীসহ অন্যান্য জাতীয় নেতার প্রভাব-ব্যাপকতার বিবরণ। লেখকগণ যেসব ঐতিহাসিক তথ্য ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে উপস্থাপন করেছেন তাতে ইতিহাস গবেষণায় বইটি হতে পারে অনন্য দলিল । ভবিষ্যতে বইটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশেরও চিন্তা-ভাবনা রয়েছে । বইটিতে বর্ণিত সময়কালে করাচিতে পড়াশোনা ও সাংবাদিকতা করতেন খ্যাতনামা সাংবাদিক হাসান শাহরিয়ার । বইটির বিষয় বিন্যাস ও প্রামাণ্যকরণে অকৃপণ সহযোগিতা দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলক সেই ধারাবাহিকতায় বইটি সম্পাদনা করেছেন। বইটির এমন সুসম্পাদিত রূপ নিয়ে আসতে তাকে সহায়তা দিয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান ও সৈয়দ ইমদাদুল হক। আর সূচারুভাবে বইটি প্রকাশে নিরন্তর সমর্থন যুগিয়েছেন পঞ্চাশ-ষাটের দশকে সেই করাচিতেই জীবন কাটানো আজকের বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমান । তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

এ বি এম সাখাওয়াত উল্লাহ

মোহাম্মদ নূরুন নবী, এফসিএ।