একাত্তরের বিজয় গাথা

৳ 325.00

মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে যে একেবারে লেখালেখি হয়নি তা নয় । তবে একটি জাতির মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ও স্বাধীনতা অর্জনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘিরে যে কর্মকাণ্ড হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি । আমাদের এখানে মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে গবেষণার জন্য আলাদা কোন গবেষণাগার হয়নি । হয়নি জাদুঘরও। বরং অনবরত মুক্তিযুদ্ধ ও যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ণ করা হয়েছে। অনবরত পুনর্বাসন করা হয়েছে রাজাকার ও মুক্তিযুদ্ধ – বিরোধীদের । বাংলাদেশের আনাচে – কানাচে , শহরে – গ্রামে যদি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের , স্মৃতির উপাদানগুলো সংগৃহীত হতো তাহলে এখনই যে তথ্য বিকৃত করা শুরু হয়েছে , তা প্রতিরোধ করা যেতো । এখন তো আশংকা হয় , ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিকা ও যুদ্ধের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করা হবে । কারণ উপাদান বিনস্ট হলে কিভাবে রচনা করা যাবে ইতিহাস? বাংলাদেশে এখন ১৯৭১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত অধিকাংশ পত্রিকার কোন কপি পাওয়া যাবে না । কারণ সেগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা হয়েছে । অনেকে আক্ষেপ করে বলেন , এত বছরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচিত হলো না । নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এত দ্রুত এতো বড় ঘটনার ইতিহাস লেখা সম্ভব নয় । কারণ , তা শুধু বিতর্কই সৃষ্টি, করতে পারে ।

দৈনিক ‘সংবাদ’ ১৯৯০ সালের বিজয় দিবসের পূর্ব মুহূর্তে ধারাবাহিকভাবে একটি ফিচার প্রকাশ করতে থাকে । বিষয় ছিল একেকটি এলাকার বিজয়পূর্ব মুহূর্ত । সংবাদের আঞ্চলিক প্রতিনিধিদের কারণে এসব লেখায় উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয়পূর্ব অনেক নাম । এবং এসব লেখায় একটি বিশেষ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে মুক্তিযুদ্ধে কোন একটি বিশেষ শ্রেণি বা গোষ্ঠী নেতৃত্ব দেয়নি বা বিজয় ছিনিয়ে আনেনি । মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন সাধারণ মানুষ । বিজয়ও ছিনিয়ে এনেছিলেন তাঁরা । এ কথা তুলে ধরার জন্যই এ সংকলন । এবং তৃণমূল পর্যায়ে উপাদান সংগ্রহের এটি একটি প্রচেষ্টা মাত্র । সংবাদে অনেক কটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিলো । বর্তমান সংকলনে যাঁরা লেখা প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন তাঁদের লেখাই শুধুমাত্র সংকলিত হলো একাত্তরের বিজয় গাথা নামে ।

সংকলিত লেখাগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল একেকটি  অঞ্চলের ঠিক বিজয়পূর্ব কাহিনী তুলে ধরা । কিন্তু সব লেখায় তা আর নির্দিষ্ট থাকেনি। অনেক লেখাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কাহিনীও বিবৃত হয়েছে । আমরা তার সম্পাদনা করিনি। কারণ,তাতেও অনেক তথ্য পাওয়া যায় । লেখকদের নিজ নিজ লেখাও রাখা হয়েছে অবিকল।