এ শহর আমার নয়

View cart “বঙ্গমাতা ও দুই কন্যার কথা” has been added to your cart.
View cart “অন্ধকারে গন্ধরাজ” has been added to your cart.
View cart “সিকদার আমিনুল হক রচনাসমগ্র ১ ও ২ খণ্ড” has been added to your cart.
View cart “গল্পসমগ্র” has been added to your cart.

৳ 75.00

ব্যক্তিগত প্রেম-অপ্রেম, বিস্ময়-বিষাদের ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে ফাহমিদুল হক তার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক জিজ্ঞাসা থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার সংযুক্তি ঘটিয়েছেন তার গল্পে। ফলে তার প্রথম গল্পের বই সে ও তার ছায়া থেকে দ্বিতীয় গল্পের বই এ শহর আমার নয় গল্পাখ্যানের দিক থেকেই অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে তার অগ্রসরণে কোনো উল্লম্ফন নেই, বরং ব্যক্তির চোখ দিয়েই তিনি বিশ্বকে দেখেছেন। এই ব্যক্তিটি ব্যক্তিগত বিষাদে বিপন্ন না হয়ে বিপদের কার্যকারণ সূত্র অন্বেষণ করছে। ফলে মহানাগরিকের আয়োজনে নিজেকে সুপ্রযুক্ত করতে না পারায় বিড়ম্বিত হয়ে মাহমুদ সৌরভ যখন ভাবে এ শহর আমার নয়, তখন তার চোখে মুক্তিযুদ্ধোত্তর কালের নাট্য-আন্দোলন থেকে হাল আমলের মুক্তবাজার বিশ্বকেও দেখি। সৌরভ শেষ পর্যন্ত একাই, কৌশলগত কারণে খানিকটা আপস করে, এ অবস্থার বিরুদ্ধে একটা লড়াইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ব্যক্তির লড়াইয়ে সমগ্রের জয় ঘোষিত হতে দেখি। এর পরের গল্প চেয়ারম্যান সহজেই রাজি হয়েছিল সম্প্রসারিত নগরায়ণের রূপ দেখতে, বিশ্বব্যাংকের ঋণে গড়ে ওঠা হাইওয়ে দিয়ে, আমাদের নিয়ে যায় মাসকাটাদীঘি গ্রামে। একটি আত্মহত্যার উল্লেখ দিয়ে শুরু হলেও এ গল্পে আবহমান বাংলার উৎসবমুখর গ্রামের চিত্রই পাই। পাই আবার গ্রাম্য-রাজনীতির খানাখন্দও, যে-রাজনীতি হিন্দু-মুসলমানের প্রেমকে অত্যন্ত গর্হিত বলে চিহ্নিত করে এবং যার অনিবার্য পরিণতিতে উচ্ছেদ হয় হরিদাসের পরিবার। ফাহমিদুলের গল্পের জমিনে গ্রাম আর নগরের ভেদরেখা ঘুচে গেছে; এমনকি, নগরের উপকণ্ঠে গ্রাম দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে গল্পের প্রেক্ষাপট হিসেবে তুলে এনেছেন বাতিঘর গল্পে-ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদী রাজনৈতিক আগ্রাসনের উৎকণ্ঠায় সারা দেশের পরিস্থিতিও গল্পটিতে চিত্রিত হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে ধর্ষণের মহোৎসব এবং দেশের এ অবস্থায় উন্নয়নকর্মী রুমা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।ডিপ্রেশন গল্পে রুমার ডিপ্রেশন সারাতে তার স্বামী ডাক্তারকে ডেকে পাঠান এবং ড.রহমান এসে দেখেন রুমার সঙ্গে দুলছে তার স্বামীও। কেননা, ফাহমিদুল তার গল্পে ব্যক্তির প্রতিরোধে সামগ্রিকতা দিতে চাইলেও তিনি জানেন গল্প দিয়ে সমাজবিপ্লবের প্রেরণা তৈরি করা গেলেও, সমাজ বদলে দেওয়া যায় না। তার সর্বসাম্প্রতিক গল্প আমার বিখ্যাত হওয়া-য় তিনি যেন নতুন রূপে পাঠকের সামনে হাজির হয়েছেন। নিভৃতচারী দুই মেধাবি তরুণ-তরুণীর ব্যক্তিগত জীবনাচরণের একটি বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তাদের এক বন্ধু সমাজে হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ছাড়াও বিখ্যাত হবার মতো সব ঘটনা তার জীবনে ঘটতে থাকে; যার নিজের ভাষ্য থেকেই জানা যায় : আমাদের সমাজে কম মেধাবী কিন্তু মেধাবীদের সঙ্গে পরিচিত লোকেরাই বিখ্যাত হয়ে থাকে। এই গল্পে হিউমার ও স্যাটায়ারের সংমিশ্রণে সমাজে ক্ষমতা-কাঠামো নির্মাণের এক অনুল্লিখিত চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে, পাঠকের দরবারে স্থায়ী হবার দাবিটিকে তিনি আরও পোক্ত করে তুলেছেন।