জলরঙে মৃত্যুদৃশ্য

৳ 80.00

ইকবাল হাসান, আমার মতে, সেই স্বল্পসংখ্যক বিরলপ্রজ লেখকের অন্যতম। যাদের আমরা নির্দ্বিধায় কবি হিসেবে শনাক্ত করতে পারি। ‘কবি’ শব্দটি আমি বেশ ভেবেচিন্তেই ব্যবহার করেছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে আজকের এই অবাধ বাণিজ্যভিক্তিক বেনিয়া সভ্যতাপৃষ্ঠ অর্থলিপ্সু ও তথাকথিত প্রতিষ্ঠাশিকারি মানুষের ভিড়ে কবি-উপাধি পাওয়ার মতো সহৃদয়সংবেদী যোগ্য ব্যক্তির সংখ্যা কড়ে-আঙুলে গুনে শেষ করা যায়। অর্থাৎ প্রকারান্তরে সেই প্রখ্যাত উক্তিটির প্রতিধ্বনি করে বলতে চাইছি যে, সমকালীন ও পরবর্তী প্রজন্মের পদ্যকারদের মধ্যে যারা অভ্যাসের তাড়নায় আজো লিখে চলেছেন, তাঁদের কেউ কেউ কবি, সকলেই নন। একজন কবির যেটা প্রথম গুণ, যার দুর্মর অভাব সর্বত্র প্রকট, সেই শব্দচেতনা ইকবালের রয়েছে। বাংলাভাষার অন্তর্লীন ধ্বনিমাধুর্য তার রচনায় শব্দের সাংগীতিক বিন্যাসে তরঙ্গায়িত হয়ে উঠেছে। এবং এই গুণটি আমি বিশেষভাবে উল্লেখ্য বলে মনে করি। কারণ,গত কয়েক দশক ধরে বেদনাবিদ্ধ বিস্ময়ে লক্ষ করেছি যে, বিষয়মাহাত্ম্য ও জটিলতত্ত্ব সত্ত্বেও শব্দবোধের অভাবে অনেক ধীমান কবি যশপ্রার্থীর নিমজ্জন ঘটেছে অকবিতার চোরাবালিতে। ইকবাল ভাগ্যবান, এ-ধরনের সংকটের মুখোমুখি তাকে হতে হয়নি। উপরন্তু তার রয়েছে কবির দৃষ্টি ও মন। তাই সানন্দে স্বীকার করতে হচ্ছে যে, এই গন্থের কবিতাগুলো গভীর তৃপ্তির সঙ্গে পড়েছি। মৃত্যুচিন্তা, যৌনকাতরতা এবং পরিণামহীন ভালোবাসাচ্যুত প্রেম-এই তিনটি বিষয় থেকে উৎসারিত তার সাম্প্রতিকতম, ঘনবদ্ধ ও সংহতবাক কবিতাগুলো কবি ইকবাল হাসানকে ঈর্ষণীয় স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল করে তুলেছে।