দূরবীণে দূরদর্শী

৳ 300.00

শেখ নুরুল হক শেক আছিয়া খাতুনের তিন ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে শেখ ফজলুল হক মণি ছিলেন সবার বড়। আর শেখ আছিয়া খুতন ছিলেন চার বোন ও দই ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। তারই ছোট ভাই ছিলেন বাঙালি জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অত্যন্ত স্নেহভাজন ভাগিনা হিসেবে নয় ষাটের দশকের গোড়া থেকেই শেখ মণি নিজ প্রতিভা, মেধা ও সাংগঠনিক ক্ষমতা বলে দেশের ছাত্র-যুব সমাজের কাছে সমুজ্জল হয়ে উঠেছিলেন। পরবর্ততে’ ৭১-এর জাতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখে এবং মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে তার যোগ্যতার নজির স্থাপন করে দেশপ্রেমের উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন। মাত্র ৩৫ বছরের জীবন, তারমধ্যে রাজনৈতিক জীবনই বা কত। তবু এই সীমিত সময়ের মধ্যেই শেখ মণি তার তীক্ষ্ম মেধা, প্রখর ধী-শক্তি এবং অসামান্য দূরদর্শীতার পরিচয় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলেন- যা ছির বিস্ময়কর। তবু তিনি ছিলেন প্রতিপক্ষ এমনকি নিজের রাজনৈতিক অঙ্গনেও বিতর্কিত। কিন্তু ৭৫-এর ১৫ আগস্ট সেই নজিববিহীন হত্যাযজ্ঞ ও মুক্তিযুদ্দের মাধ্যমে অর্জিত রাজনীতির পটপরিবর্তনের পর সচেতন দেশবাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাজনীতির অঙগনে শেক মণিই ছিলেন অধিকতর দূরদর্শী নেতা। যিনি আগে থেকে দল ও সরকারকে বারবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন। শেখ মণির এই ‘দূরবীনে দূরদর্শী’ বইটিতে যে সব লেকা স্থান পেয়েছে তা অভিনিবেশের সাথে পাঠ করলেই তার যোগ্যতা, মেধা ও দূরদর্শীতার সম্যক পরিচয় পাওয়া যাবে।

শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রেই নয়, তিনি ছিলেন মনে প্রাণে একজন প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা এবং সাংবাদিক। পাকিস্তান আমলে যখনই তিনি কারগারের বাইরে থেকেছেন তখনই দৈনিক ইত্তেফাক, দি পিপলস, সাপ্তাহিক বাংলার বাণীতে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজিতে কলাম লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই কলকাতা থেকে সাপ্তাহিক বাংলার বাণী প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন তার সম্পাদক হিসেব। স্বাধীনতার পরে’ ৭২ এর ২১ ফেব্রুয়ারিতে সাপ্তাহিক বাংলার বাণীকে দৈনিক হিসেবে প্রকাশ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই সাপ্তাহিক ‘সিনেমা’ ও দি কবাংলাদেশ টাইমস’ প্রকাশ করেন।

শেখ মণির সাহিত্য প্রতিভার প্রথম প্রকাশ ঘটে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে। অনার্সসহ এমএ পাস করার পর ‘বৃত্ত’ নামে তিনি একটি উপন্যাস লেখেন এবং তা প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে বইটি আর তেমনভাবে প্রচারিত হতে পারেনি। ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান বয়কট করার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। পূর্ব পাকিস্তানের কূখ্যাত গভর্নর মোনায়েম খানের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সার্টিফিকেট নিতে রাজি নয় বলে সরকারকে জানিয়ে দেয়। সেই আন্দোলন সফল হলেও সরকারি বাহিনীর সাথে ছাত্র সমাজের তুমুল আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকারের নির্দেশেই এ আন্দোলনের প্রধান দুই নেতার এমএ ডিগ্রী বাতিল ঘোষণা করা হয়। এর একজন ছিলেন আসমত আলি শিকদার ও অন্যজন শেখ ফজলুল হক মণি। শেখ মণিকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কারাগারে থেকেই তিনি ড. আলীম আল রাজী আইন কলেজ থেকে এলএলবি পরীক্ষা দিয়ে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হন। অর্থাৎ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি সর্বদা নিবেদিত শেক মণি একজন আইনজ্ঞও ছিলেন। তবে পেশা হিসেবে তিনি তা গ্রহণ করেননি। তার প্রধান নেশা ও পেশা ছিল রাজনীতি ও সাংবাদিকতা।