নিষিদ্ধ

৳ 350.00

তসলিমা নিসরিনের জন্ম ২৫ আগস্ট ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় থেকে পাস করে ১৯৯৩ সাল অবধি চিকিৎসক হিসেবে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেছেন। চাকরি করলে লেখালেখি ছাড়তে হবে- সরকারি এই নির্দেশ পেয়ে তিনি সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দেন। তসলিমা নাসরিন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম আপসহীন নারীবাদী লেখক। লেখালেখির জন্য অসাধারন জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, আবার বিতর্কিত ও হয়েছেন। নারীর অধিকারের কথা বলতে গিয়ে তিনি শুধু ধর্মীয় মৌলবাদীদের আক্রমণের শিকার হননি, গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। মৌলবাদীরা সারাদেশ জুড়ে তাঁর ফাঁসির জন্য আন্দোলন করে, এমনকি তাঁর মাথার মূল্য ঘোষণা করে। এর পরিণামে তিনি ১৯৯৪ সালে তাঁর প্রিয় স্বদেশ থেকে বিতাড়িত। দেশে এখনও ঝুলছে তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া, বাকস্বাধীনতাবিরোধী লোকদের ঠুকে দেওয়া অনেকগুলো মামলা মানবতার পক্ষে লেখা তাঁর তথ্যভিত্তিক উপন্যাস লজ্জা, নিজের শৈশব স্মৃতি নিয়ে আমার মেয়েবেলা, কৈশোর ও প্রথম যৌবনের স্মৃতি নিয়ে লেখা উতাল হওয়া, আত্মজীবনীর তৃতীয় ও চতুর্থ খণ্ড ক এবং সেইসব অন্ধকার বই পাঁচটি সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। প্রথমে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বৈরীভাব সৃষ্টি হতে পারে এই আশংকা দেখিয়ে এবং পরে বিশেষ একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত করা হয়েছে এই অপরাধের ভিত্তিতে তাঁর আত্মজীবনীর তৃতীয় খণ্ড দ্বিখণ্ডিত পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এক বছর ন’মাস ছাব্বিশ দিন নিষিদ্ধ থাকার পর হাইকোর্টের রায়ে মুক্তি পেয়েছে বই। দুই বাংলায় এই বইয়ের (পশ্চিমবঙ্গে দ্বিখণ্ডিত, বাংলাদেশে ক) কারণে দু’জন লেখক তাঁর বিরুদ্ধে মোট একুশ কোটি টাকার মামলা রুজু করেছেন। দীর্ঘ নির্বাসন জীবনে তসলিমা নাসরিন প্রচুর পুরষ্কার এবং সম্মান অর্জন করেছেন। এর মধ্যে আছে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট থেকে মুক্তচিন্তার জন্য শাখারত পুরষ্কার, ধর্মীয় শান্তি প্রচারের জন্য ইউনেস্কো পুরষ্কার, ফরাসি সরকারের মানবাধিকার পুরষ্কার, ধর্মীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই- এর জন্য ফ্রান্সের এডিট দ্য নান্ত পুরষ্কার, সুইডেনের লেখক সংস্থা থেকে কুর্ট টুখোলস্কি পুরষ্কার, জার্মানির মানববাদী সংস্থার আরউইন ফিশার পুরষ্কার, নারীবাদ বিষয়ে লেখালেখির কারণে ফ্রান্সের সিমোন দ্যা বোভেয়া পুরষ্কার, আমেরিকার ফেমিনিস্ট প্রেস পুরষ্কার, বেলজিয়ামের গেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লোভেইন, আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব প্যারিস এবং প্যারিস ডিডেরো ইউনিভার্সিটি থেকে পেয়েছেন সাম্মানিক ডক্টরেট। ফেলোশিপ পেয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভারত থেকে নির্বাচিত কলাম এবং আমার মেয়েবেলা গ্রন্থের জন্য দু’বার আনন্দ পুরষ্কার পেয়েছেন। ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ইতালীয়সহ মোট তিরিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে তসলিমার বই। মানববাদ, মানবাধিকার, নারী- স্বাধীনতা ও নাস্তিকতা বিষয়ে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন মঞ্চে এবং হার্ভার্ড, ইয়েল, অক্সফোর্ড, এডিনবরা, সরবনের মতো বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সারা বিশ্বে তিনি একটি আন্দোলনের নাম। কলকাতায় স্থায়ীভাবে তিন বছর বসবাসের পর তাঁর ওপর মৌলবাদী হামলার ফলস্বরূপ ২০০৮ সালে তিনি ভারত ত্যাগ করতে বাধ্য হন। তবে ভারতে গত বছর তিনি বাস করার অনুমতি পেয়েছেন। এখনও তিনি যাযাবর জীবনযাপন করছেন। ফেরার অপেক্ষা করছেন বাংলাদেশে অথবা পশ্চিমবঙ্গে।