পাকিস্তানে আটক দিনগুলি

৳ 120.00

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর শুরু হলাে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাঙালিদের দুর্দিন । আমার স্বামী বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত সচিব মােহাম্মদ আব্দুল লতিফ মণ্ডল, সে সময় পাকিস্তানে কর্মরত ছিলেন। সেকশন অফিসার হিসেবে । আমরা থাকতাম ইসলামাবাদে সরকারি কোয়ার্টারে। পাকিস্তান সরকারের প্রথম রােষানলে পড়েন সরকারি বাঙালি অফিসাররা । কারা বাংলাদেশে ফিরে যেতে চায়?’- এ মর্মে চাকরিরত বাঙালিদের কাছে নির্ধারিত ফরমে অপশন চাওয়া হয়। বাঙালি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বাংলাদেশে যাওয়ার ইচ্ছে জানান। পাকিস্তান সরকার তাদের মতামত জানার পর সমস্ত বাঙালি অফিসারকে চাকরিচ্যুত করেন । মূল বেতনের অর্ধেক খােরাকি ভাতা ৫০০ টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের অবস্থা তখন করুণ । আর্থিক ও মানসিক কষ্ট এবং নিরাপত্তার অভাব । পাঠানরা টাকার বিনিময়ে বাঙালিদের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার সুযােগ করে দেয় । তা ছিল অমানবিক । মালবাহী ট্রাকে ওপরে ভারী বােঝা চাপিয়ে মানুষের বসার ব্যবস্থা করে দিত ভেতরে । শিশুদের দেওয়া হতাে ঘুমের ওষুধ । সরকার এটা বুঝতে পেরে বাঙালিদের পাহারায় রাখার ব্যবস্থা করে। এ সময় চিঠি আদান-প্রদান বন্ধ ছিল। একেক সময় মনে হয়েছে, ওরা আমাদের মেরে ফেলবে । তারপর এক রাতে সমস্ত বাঙালি কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়। তাদের পরিবার বাইরে ছিল ১৫ দিন । তারপর তাদেরও নিয়ে যায় ক্যাম্পে । আমাকে আট মাসের বাচ্চা নিয়ে একা থাকতে হয়েছে দেড় মাস । আমাকেও নেওয়া হয় ক্যাম্পে। এখানে থাকতে হয়েছে। ৫ মাস । এই কয় মাস জীবনের কঠিন সময় পার করেছি। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে বন্দিবিনিময়ের মাধ্যমে আমাদের দেশে পাঠানাে হয় । অনেক বছর পর বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হলাে । নূরহাসনা লতিফ ১৫.০৫.২০১৮