প্রাণ ও প্রকৃতি

৳ 200.00

দুনিয়াব্যাপী পরিবেশের যে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে এটা এখন আর কারও অজানা নয়। জলবায়ুর পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপদ নিয়ে সবাই কথা বলছে। কিন্তু ব্যাপক তোড়জোড়ের পরও, সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি চলনসই নমনীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছতেও ব্যর্থ। দীর্ঘদিন ধরে ‘উৎপাদন’ ও ‘উন্নয়ন’- এর নামে প্রকৃতি বিধ্বংসী যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা চলেছে তা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে রাজি নয়। উন্নয়নের যে দর্শন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির যে নকশা এতদিন নির্বিচারে দাপট চলছে জীবাশ্মভিত্তিক এবং মুনাফা তাড়িত সভ্যতাকে আরো দানবীয় করে তোলার জন্য। ইতোমধ্যে যুদ্ধ ও মারণাস্ত্র উৎপাদনের অদিন এবং কোম্পানির মুনাফা কামানো উপায়ে পরিণত হওয়া ‘আধুনিক বিজ্ঞান’-ই আমাদের সব সমস্যার সমাধান করবে সেটা হয়ে উঠেছে  কুসংস্কার এবং অন্ধবিশ্বাস। ফলে আরো ক্ষতিকর কারিগরি উদ্ভাবন এবং তা ব্যবহারে আমাদের বাধ্য করার চেষ্টা থেমে নেই। সাহায্য পাওয়ার নামে আমরাও আগের মতো অবলীলায় সভ্যতার ক্ষত বাড়িয়ে তুলতেই উদগ্রীব দেখা যাচ্ছে। সেই ষাটের দশক থেকে এক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের নামে অপরীক্ষিত ও ক্ষতিকর সামগ্রী ব্যবহারে বাধ্য করা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নামে মাটি ও পরিবেশ বিনষ্টকারী সারবিষ আর কীটনাশকে প্রাণের বিনাশ ঘটানো, সেচের নামে মাটির তলার পানি তুলে আর্সেনিক সৃষ্টি, তথাকথিত উন্নত জাতের নামে কৃষকের হাত থেকে স্থানীয় জাত ছিনতাইসহ বাঁধ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের নামে এত এত প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ হয়েছে যে বাংলাদেশের বৈচিত্রময় প্রাণ প্রাচুর্য, উর্বর মাটি, পানি এবং খাদ্য ও কৃষি ব্যবস্থা আজ প্রায় বিপন্নতার দ্বারপ্রান্তে সাথে আছে আঞ্চলিক পানি আগ্রাসন। গত তিন দশক ফরহাদ মজহার নিরলসভাবে নয়াকৃষি আন্দোলনে নিয়োজিত। আত্মঘাতী প্রকৃতি বিনাশী কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে এসে প্রাণ ও প্রকৃতির লালন এবং পরিচর্যার প্রায়োগিক জমিন তৈরিতে, মানুষ ও প্রকৃতির অনিবার্য সম্পর্কের নতুন দিগন্ত মেলে ধরে আগামী দুনিয়া গড়ার ইশারাগুলোকে চিহ্নিত করার কাজে।  এই লেখাগুলো সেই অভিপ্রায় ও দায় থেকে রচিত।