বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

৳ 1,500.00

ইতিহাস কোনো ব্যক্তিবিশেষের কল্পনা-বিলাসের হতে পারে না, ইতিহাস অগ্রসর হয় তথ্যের হাত ধরে। তথ্যের সাহায্যে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে বলেই ইতিহাস একটি বিজ্ঞান। তথ্য বিশ্লেষণে একজন আরেকজনের থেকে ভিন্নমত পোষণ করতে পারেন, বিশ্লেষণ পদ্ধতি ভিন্নতর হতে পারে, কিন্তু ইতিহাসে নিজস্ব মনগড়া কথা বলবার কোনোরূপ অবকাশ নেই। যা ঘটে  তার বিবরণ, তার তথ্যনিষ্ঠ ও কালানুক্রমিক বর্ণনা, এবং তার যুক্তিনিষ্ঠ ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণই ইতিহাস। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে, ইতিহাসকে  নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিপিপাসা আর সেই পিপাসা থেকে উদ্ভূত শ্রেণী-সংগ্রামের এক অমোঘ প্রবাহ। এক শ্রেণির লোক সুখ ও আনন্দের লোভে ক্ষমতার মোহে, অর্থে ও ভোগের লালসায়  অপর  শ্রেণিকে দাসত্বের শৃঙ্গলে বাধতে চায়, অপর শ্রেণি চায় বলদৃপ্ত পেশিগত শক্তি নিয়ে সেই শৃঙ্খল ছিঁড়ে মুক্তি পেতে। বিশ্বের সর্বত্র ইতিহাস তাই একদিকে এই শৃঙ্খলে ছিঁড়ে বাঁধনের করুণ ও বীভৎস কাহিনির, আর অন্যদিকে  শৃঙ্খল মোচনের যে প্রত্যয়সিক্ত সংগ্রাম দেশে দেশে যুগের পর যুগ অব্যাহত গতিতে চলে আসছে তার বিশ্বস্ত বর্ণনায় তৎপর তথ্যনিষ্ঠ ও কালানুক্রমিক বিবরণের মাধ্যমে এবং বৈজ্ঞানিক ও যুক্তিবাদী বিচার-বিশ্লেষণের আলোকে ইতিহাস এই বন্ধন ও বন্ধন-মুক্তির স্বরূপ উদ্ঘাটন করে। ইতিহাসের মূল লক্ষ্য একটি সমাজ ও জাতি – কিন্তু কোনো সমাজে বা জাতিতে এমন একজন ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে, যার কার্যকলাপ সেই সমাজ বা জাতিকে এক নতুন মাহাত্নে অভিষিক্ত করে নতুনভাবে আলোড়িত করে একটি দেশ, সমাজ বা জাতিকে নবজন্ম দান করে। শেখ মুজিব এমনি একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তি। ইতিহাসের মূল লক্ষ্য যদিও সমাজ তথাপি এমন ব্যক্তিত্বকে ইতিহাস উপেক্ষা করতে পারে না, কেননা সমাজ এমন ব্যক্তিত্বের মধ্যে আপন চলার শক্তি খুঁজে পায়। সমাজের ব্যথাবেদনা-দীর্ঘশ্বাস, সমাজের আনন্দ, আশা-নিরাশা, হাসি-কান্না তাঁর ব্যক্তিত্বে লালিত হয় তিনি সমাজের পুঞ্জীভূত শক্তির প্রতীক। একটি সমাজকে তুলে ধরতে হলে এমন ব্যক্তি সামনে আসেন, আবার এমন ব্যক্তিকে তুলে ধরতে গেলে সমাজ সামনে আসে। সমাজ এবং এমন ব্যক্তিত্ব পরস্পর পরস্পরের সম্পূরক। শেখ মুজিব এমন একটি ব্যক্তিত্ব। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস বর্ণনা করতে গেলে, এই দেশের সমাজের উত্থান-পতন, নবজাগরণ ও স্বাধীনতা ইত্যাদির ইতিবৃত্ত লিখতে হলে। শেখ মুজিবকে র্সবাগ্রে ও সর্বত্র স্মরণ  করতে হয়। আবার শেখ মুজিব সম্পর্কে কিছু লিখতে গেলে কিংবা তাঁর জীবনৈতিহাস বর্ণনা করতে হলে, তাঁর জননী জন্মভূমি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, প্রতিবেশ, সমাজ, ঐতিহ্য সবই সামনে ও পেছনে এসে ভিড় করে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান গ্রন্থে সকল বক্তব্য পেশ করবার চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে  কথা বলতে গিয়ে ভাবাবেগকে নয় তথ্যকেই বড় করে দেখাবার চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেই তথ্য যেমন বঙ্গবন্ধুর জীবনকে প্রতিফলিত করেছে সত্যালোকে, তেমনি সেই তথ্যের ঔজ্জ্বলে প্রতিবিম্বিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস। বাংলাদেশের ইতিহাস ও শেখ মুজিব দুটো অবিচ্ছিন্ন সত্তা। একটিকে ছাড়া অপরটি অসম্পূর্ণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রন্থটি বঙ্গবন্ধুর  জীবনী ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একটি প্রামাণ্য দলিল। এখানে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে সত্যকে  উদ্ধার ও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গ্রন্থটি একটি অমূল্য ইতিহাস।