শিক্ষা ও উন্নয়ন প্রত্যাশা

৳ 200.00

শিক্ষার সম্পর্ক জ্ঞানের সঙ্গে যার জগৎ বিপুল ও বিকাশসান। মানুষের সবচেয়ে দুঃসাহসিক অভিযান হল জ্ঞানের জগতে। জ্ঞানের সংগ্রহ, সঞ্চারণ, সংযোজন এবং নতুন জ্ঞান সৃষ্টির যে আয়োজন, যাকে আমরা শিক্ষা বলি, সেটাই মানব সভ্যতার সবচেয়ে বড় উদ্ভাবন। জ্ঞানের বিকাশমানতার যে গল্প। জ্ঞানের সাধনা মানুষকে দিয়েছে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি এবং পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণের অপরিসীম ক্ষমতা। মানুষের এই জ্ঞান ক্রম বিস্তারমান। এই জ্ঞান শুধু পুঞ্জিভূত হয় না, এর বৃদ্ধিলাভ ও বিকাশ ঘটে বিপকীয় প্রক্রিয়ায়, যেখানে সঞ্চিত জ্ঞান অথবা বাইরে থেকে পাওয়া তথ্য ও অভিজ্ঞতাই এর খাদ্য। শিক্ষা তাই যানন্ত্রিক নয়, একটি জৈব ব্যবস্থার মতন। আমরা এমন একটি সময়ে এস পৌঁচেছি যেখানে জ্ঞানের সংগ্রহ ও অগ্রগতি শুধু বাইরের জগৎ সম্পর্কেই উপলব্ধি দিচ্ছে না, জ্ঞানের বিকাশের ইতিহাস ও জ্ঞানের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকেও বোধগম্য করছে। জ্ঞানের গঠন, এর নানা উপাদান ও এর বিকাশের ধারা সম্পর্কেও উপলব্ধি সৃষ্টি করছে। ভৌতজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানবিক বিদ্যা, সমাজ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান ও আচরণ বিজ্ঞান অভূতপূর্ব বিকাশ লাভ করেছে, যা একই মানুষের উদ্ভব, তার আত্ম পরিচয়, অন্যের সঙ্গে তার সম্পর্ক, সমাজ এবং প্রকুতি ও মহাবিশ্বে তার অবস্থান জানতে সাহায্য করেছে। বহির্বিশ্ব সম্পর্কে মানুষের নৈর্ব্যক্তিক জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থাৎ মানুষ আত্মকেন্দ্রিকতা কাটিয়ে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ দুষ্টিতে বিশ্বকে জানতে পেরেছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে তার জ্ঞানের আভ্যন্তরীণতা। নিজেকে নিগূঢ়ভাবে জানার একটি দৃষ্টান্ত হল, ইতিহাস সচেতনতা। আধুনিক ইতিহাসের মূল উপাদান জ্ঞানের আবিষ্কার ও তার  আবিষ্কারক। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির মূলে কাজ করেছে দুটো ঘটনা। একটি হলো মানুষের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, অন্যটি বিজ্ঞানীদের গণিতের ব্যবহার ও তত্ত্ব সুষ্টি। সময়ের সঙ্গে আমরা ক্রমাগত গভীরতর রূপে জানছি জ্ঞানের সৃষ্টি তত্ত্ব, জানছি জ্ঞান কীভাবে সঞ্চারিত হয়, সংরক্ষিত হয়, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় ও উদ্ভাবিত হয়। জ্ঞান আগে  এত দ্রুত বৃদ্ধি পেত না এখ যা ঘটছে। এটি সম্ভব হচ্ছে কারণ, জ্ঞানকে আমরা ক্রমাগত বেশি করে মস্তিস্কের বাইরে সংরক্ষণ করতে পারছি। শিক্ষার অগ্রহতির জন্য জ্ঞানের সংরক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জ্ঞান যেখানে নিছক উপাত্ত বা তথ্যের স্থির কাঠামো, সেখানে তা বুদ্ধির ব্যাপার নয়। জ্ঞানের বিকাশের এই ত্বরান্বিত গতি একটি জটিল প্রক্রিয়া। একথা এখন স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, উন্নয়ন এখন মানবিক প্রচেষ্টার ফসল। অর্থ সংগ্রহের জন্যেও শিক্ষিত মানুষ চাই, যেমন চাই প্রাকৃতিক সম্পদকে ব্যবহারের জন্যে ও বাজার সৃষ্টির জন্যে। একটি জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এর শিক্ষিত জনশক্তি। শিক্ষা অগ্রাধিকার না পেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে উন্নয়ন প্রত্যাশা ও কর্মস্পহা সৃষ্টি হয় না, এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যোগ্য, দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব নির্বাচনেও তারা ব্যর্থ হয়। একটি দেশকে অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও অব্যাহত অগ্রগতির ধারায় পরিচালিত করতে হলে প্রাথমিক ভাবে বড় ধরনের বিনিয়োগ করতেই হবে শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং সেজন্য ত্যাগও স্বীকার করতে হবে সবাইকে। জ্ঞান কোন নিরপেক্ষ ও নিরীহ ব্রাপার নয়। একটি মানুষের সামগ্রিক আচরণ শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত তার জানা তথ্য, তার অভিজ্ঞতা ও বিশ্বজগৎ সম্পর্কে তার উপলব্ধির দ্বারা। একটি স্বাধীন ও উন্নত জাতি সত্যি গড়ে তোলা সম্ভব, শিক্ষার ভিতর দিয়ে। শিক্ষা মানুষকে বদলে দিতে পারে এবং সমাজকেও। ফলে আমাদের উন্নয়ন প্রত্যাশা ও অস্তিত্বের ভিত্তি শিক্ষা এমন একটি প্রতীতি নিয়েই এই বইয়ের প্রবন্ধগুলো রচিত। আমরা জাতি হিসেবে বিভক্ত হয়ে পড়ছি শিক্ষা ব্যবস্থা নানা ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ার জন্যে। বৈচিত্র্য শিক্ষাকে বিভক্ত করে না যতক্ষণ বিষয়গুলো প্রকাশ সাধ্যতার শর্ত মানে। শুধু দেশের সীমার মধ্যেই নয়, সমগ্র বিশ্বের পটভূমিতে ও প্রবাহমান কালের প্রেক্ষাপটে শিক্ষাকে সামঞ্জস্যপূর্ল ও গতি শীল রাখতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থা হতে হবে আধুনিক। শিক্ষা নিয়ন্ত্রিত হবে না পূর্ব নির্ধারিত কোন অবিচল নীতি, বা আদর্শ দ্বারা। বরং শিক্ষাই নবনব জ্ঞানের অন্তহীন ধারায় নির্ধারণ করবে আমাদের নীতি ও আদর্শ। গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলো যে একক ভাবনার দ্বারা প্রভাবিত তা হল জ্ঞানের এই বিকাশমানতা। গ্রন্থটি বাংলাদেশের শিক্ষা ওশিক্ষা ব্যবস্থার সার্বিক অবস্থার পরিচয় বিধৃত করার পাশাপাশি সর্বাধুনিক শিক্ষাদর্শনের আলোকে এর ক্রমশ সার্বিকোন্নয়নের অবকাঠামো  বৈজ্ঞানিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামো  পুনর্বিন্যাসীকরণে অত্যাবশ্যকীয় এবং নিঃসন্দেহে যুগোপযোগি। শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং  শিক্ষান্নোয়নে আগ্রহী যেকোন চিন্তাশীল ব্যক্তির নিকটও গ্রন্থটি সমানভাবে আকর্ষণীয়।