সম্ভ্রমহানির আগে ও পরে

৳ 70.00

প্রাত্যহিক-অনাড়ম্বর ভাষায় এমন সব কাহিনি রচনা করেন তিনি, যাদের আপাত সরল চেহারার আড়ালে আছে বহুস্তরে সজ্জিত এক একটা স্বতন্ত্র ভাবনা-জগৎ। এই গ্রন্থভুক্ত গল্পগুলোর পটভূমি বিস্তৃত হয়েছে গ্রামবাংলার নিম্নবর্গের সমাজ থেকে শহরের বিক্তবান পরিবারের অন্দরমহল পর্যন্ত। লেখক জীবনকে উল্টে-পাল্টে দেখতে চেয়েছেন নিরাসক্ত চোখে। কোথাও অতিনাটকীয়তা নেই-বরং পরিমিতি বোধের অদৃশ্য সুতোটি অটুট থেকেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বিশ্বজিৎ চৌধুরী গল্পে দেখা মেলে দাসপাড়ার হরিকিশোরের মতো চরিত্রের, বংশের একমাত্র ফর্সা পুত্র-সন্তান গৌরগোপাল যার গর্বের কারণ। গ্লানিময় অতীতের কথা ভুলতে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে তুললেও অতীত গৌরগোপালের পিছু ছাড়ে না। আমেরিকায় প্রবাসী হয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ মেয়েকেই বিয়ে করে সে, আর তাদের যে সন্তান হয় গায়ের রঙের সাথে মিল রেখে তার নাম রাখে কৃষ্ণগোপাল। নাগরির দাম্পত্য জীবন কিংবা প্রেম ও প্রেমহীনতার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে তাঁর গল্পে। বিশ্লেষণের নৈপুণ্যে ব্যক্তিমানুষের মনস্তত্ত্ব, সম্পর্কের দ্বন্দ্ব ও জটিলতার বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়। সমসাময়িক কালের সামাজিক অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতাও বাদ পড়েনি। কখনো কর্মজীবী মায়ের চোখ দিয়ে আজকের এই অবক্ষয়কে দেখতে চেয়েছেন তিনি, যেখানে এমনকি দুঃস্বপ্নেও মা তার শিশু-পুত্রকে দেখতে পায় কামুক পুরুষ হিসেবেই। কখনো দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরা সোলেমানের অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি বুঝতে চেয়েছেন এই দেশ আদৌ আর বাসযোগ্য আছে কি-না। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া সোলেমানের সামনে সত্যিই আর কোনো পথ খোলা আছে কি-না, বিশেষত যার কানে সর্বক্ষণ প্রতিধ্বনিত হয় ধর্ষক মাস্তানদের মত্ত প্রলাপ-‘জল্ দি কর! চলতি বরা’ !