৳ 140.00
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রকৃত অর্থেই ছিল এক ব্যাপক জনযুদ্ধ। স্বাধীনতার বিপক্ষের কিছুসংখ্যক দালাল, রাজাকার, আলবদর ছাড়া আপাময় বাঙালির নানাভাবে অংশগ্রহণ এ যুদ্ধকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। কারো অবদানই ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। এমনই একজন ছমিরণ। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কম লেখাপড়া জানা নিতান্তই সরল গ্রাম্য এক গৃহবধূ। যুদ্ধকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ওর দুঃসাহস, দুর্দমনীয় মনোবল মুক্তিযুদ্ধের এক অসাধারণ অনুষঙ্গ। নিজের ঘরে গর্ত খুঁড়ে চৌকির নিচে জমা করে গেরিলাদের আগ্নেয়াস্ত্র। রাত জেগে পাহারা দেয়। স্বামী, পুত্রদের যুদ্ধে পাঠিয়ে একা কাটায় দুঃস্বপ্নের প্রহর। চারদিকে শত্রুর হুমকি-ধমকি, ইজ্জত খোয়াবার ভয়, মৃত্যুর বিভীষিকা, শঙ্কা ওকে টলাতে পারেনি। গ্রামে আর্মি ক্যাম্প। প্রাণভয়ে মানুষ তটস্থ। চুপেচুপে পালাচ্ছে যত পারছে। নির্যাতন, নিপীড়নের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। আশপাশের অসহায় মানুষের আহাজারি, দুঃখ-কষ্ট দেখে বারবার ভেঙে পড়ে। লোকচক্ষুর অন্তরালে, নিজের ঘরে দোর এঁটে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। তবুও সাহস হারায় না। কাঙ্ক্ষিত অর্জনের পথ থেকে একচুলও সরে দাঁড়ায় না। ঘরে জমানো অস্ত্র। নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না তা দিয়ে। এসব জীবনেও চোখে দেখেনি। দা, কুড়াল, বল্লম, শাবল নিয়ে বসে থাকে রাতভর। শত্রুর মোকাবেলা করার হাস্যকর প্রচেষ্টা জেনেও দুর্দমনীয়। একদিন সময় হয়। ছমিরণের ভাঙার থেকে অস্ত্র নিয়ে গেরিলারা আক্রমণ চালায় শত্রুদের ওপর। ধুলায় মিশিয়ে গ্রাম আবার জেগে ওঠে মৃত্যু-গুহার অন্ধকার থেকে। বিজয় আনন্দে মুখরিত পথ-প্রান্তর। ধ্বনি ওঠে-জয়তু ছমিরণ, জয়তু রমণী সাহসিকা।