নেতার মায়ের মৃত্যুতে

View cart “শনিবারের গল্প” has been added to your cart.

৳ 75.00

সেই কিশোর বেলায়ই বাবার বুকজোড়া উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রথমে গল্প পড়ে উপন্যাস লিখতে লিখতে কখন যে বয়ঃসন্ধিকাল এসে গেছে তা বুঝি নিজেও টের পাননি আনা ইসলাম। এর ভেতর জাতীয় জীবনেও কত যে ঝড়ঝঞ্ঝা বয়ে গেছে তার বুঝি হিসাব নেই। তরুণ আনা আলোড়িত হৃদয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন স্বাধীনতা সংগ্রামের তুমুল তরঙ্গ। নিজের লেখালেখিতেও উঠে এসেছে কালজয়ী মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বপূর্ণ গাথা। এরপর বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবিশ্রেষ্ঠ আহসান হাবীবের প্রেরণায় যার যাবতীয় লেখালেখির সূত্রপাত। তাকে কি আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়? আহসান হাবীব কবি হিসেবে যেমন ক্রান্তদর্শী, সম্পাদক হিসেবেও ছিলেন পাকা জহুরি। তাই তাঁর পক্ষে আনার  জাত চিনতে অসুবিধে হয়নি। তৎকালে মেয়েদের পক্ষে বিপজ্জনক পেশা সাংবাদিকতায় নিয়োজিত হয়ে যে সাহস ও শৌর্যের পরিচয় দিয়েছেন তা সম্ভবত আনার পক্ষেই সম্ভব। প্রথমে দেশের বিভিন্ন ছোট্টখাটো কাগজ দিয়ে শুরু করে একে একে ভোরের কাগজ,  সচিত্র সন্ধানী, দৈনিক বাংলা, ইত্তেফাকয়ের মতো পত্রপত্রিকায় শিল্পকলা, সমালোচনা, সাক্ষাৎকার নানা ধরনের টুকিটাকি লেখা লিখতে লিখতে বৈবাহিক সূত্রে অসম সাহসী মুক্তিযোদ্ধা চিত্রশিল্পী স্বামী শাহাবুদ্দিন ও দুই কন্যা চিত্রসিঁথি ও চর্যাপদকে নিয়ে স্থায়ীভাবে সমগ্র বিশ্বের সাংস্কৃতিক জগতের পীঠস্থান প্যারিসে বসবাস করলেও লেখালেখিতে কখনও ক্ষান্তি দেননি। ওই দূর প্রবাসে আনা ও শাহাবুদ্দিনের আতিথেয়তা তো প্রবাদপ্রসিদ্ধ। একদিকে জগৎজোড়া খ্যাত শিল্পী স্বামীর আঁকাআঁকি আর যোগ্যতমা স্ত্রীর লেখালিখি কিন্তু অব্যাহত গতিতেই চলেছে। চল্লিশোত্তর বয়ঃসীমার মধ্যেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী ‘ফ্রিদা কালো: কষ্টের মনীষা’ আর ‘যুদ্ধ যখন তাড়িয়ে বেড়াতো’র মতো দু‘টি সুখপাঠ্য বইয়ের রচয়িতা আনার প্রথম প্রেম বই পড়া ও কেনার নেশায় দুর্মরভাবে আসক্ত। এর ভেতরও বর্তমান গ্রন্থের গল্পগুলির মতো হীরকদ্যুতি ছড়ানো দশটি গল্প লেখা আনার অশেষ শক্তিমত্তারই পরিচায়ক। আনার আর এক শখ দেশ-বিদেশের দুর্লভ শিল্পকর্ম সংগ্রহ, সর্বোপরি মানুষ দেখা, জানা ও চেনায় যে ওর অন্তহীন উৎসাহ তা তার গল্পগুলির গায়ে –গতরে, ঘ্রাণে-স্বাদে প্রবলভাবে দৃশ্যমান ও উপভোগ্য। প্রবাসে থেকেও দেশ ও সাধারণ মানুষের জীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষা স্বপ্নসাধ, মনন, জ্ঞান ও জ্ঞাপনের এক অনুপম রঙিন প্রদর্শনী যেন।