বাক্যতত্ত্ব

View cart “তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান” has been added to your cart.

৳ 1,000.00

ছোট, শানিত, ও বিজ্ঞানমনস্ক একটি বই বেরোয় বিশ শতকের দ্বিতীয়াংশে। বইটির নাম সিন্ট্যাক্টিক স্ট্রকচারস, রচয়িতার নাম আবরাম নোআম চোমস্কি। সিন্ট্যাক্টি স্ট্রাকচারস-এর প্রকাশ ভূকম্পনতুল্য। তখন পশ্চিমে উপাত্তপ্রণালিপদ্ধতি পরিবৃত হয়ে বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানসাধনা করছিলেন সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানীরা; তাঁরা শনাক্ত ও শ্রেণীকরণ ক’রে চলছিলেন বিভিন্ন ধরনের ভাষাবস্তু; এবং নিজেদের শাস্ত্রকে খুবই বিজ্ঞানসম্মত ভেবে পাচ্ছিলেন পরম পরিতৃপ্তি। এমন সময়ে বেরোয় সিন্ট্যাুুক্টিক স্ট্রাকচারস এবং বদলে যায় বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রথাগত ও সাংগঠনিক ধারণা। চোমস্কি সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানকে বলেন ‘শ্রেণীকরণী ভাষাবিজ্ঞান’, এবং দেখান যে সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের মর্মে লুকিয়ে আছে মারাত্মক ত্রুটি। সাংগঠনিকেরা সীমাবদ্ধ থেকেছেন বস্তুর বাহ্যস্তরে; উপাত্তের ভেতরে প্রবেশে তাঁরা হয়েছেন ব্যর্থ। ভাষার মতো ব্যাপক সৃষ্টিশীল বিষয়কে তাঁরা সীমাবদ্ধ করেছেন ধ্বনিলিপিতে আবদ্ধ তুচ্ছ উপাত্তে। ব্যস্ত থেকেছেন তাঁরা ভাষার বহিরঙ্গের ব্যবচ্ছেদ, এবং ভাষার আন্তর শৃঙ্খলা উদ্ঘাটনের বদলে নিবিষ্ট থেকেছেন ভাষার তুচ্ছ খণ্ডাংশের বহিঃস্তরের শ্রেণীকরণ ও বর্ণনায়। চোমস্কি সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানকে বাতিল ক’রে প্রতিষ্ঠা করেন এক নতুন ভাষিক তত্ত্ব; প্রস্তাব করেন ট্রান্সফরমেশনাল জেনারেটিভ গ্রামার বা রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ কাঠামো, যার কেন্দ্রবস্তু ভাষার অনন্ত অসংখ্য বাক্য। এখন এটা স্বীকৃত যে ভাষাবিজ্ঞানের সমগ্র ইতিহাসের চোমস্কীয় ভাষিক তত্ত্ব সবচেয়ে অভিনব ও বৈপ্লবিক; পুব-পশ্চিমের ভাষাশাস্ত্রে এর কোনো তুলনা পাওয়া যায় না। রূপান্তর ব্যাকরণের আবির্ভাবকে অভিহিত করা হয় চোমস্কীয় বিপ্লব নামে। চোমস্কীয় বিপ্লব বাক্যিক বিপ্লব, যা সৃষ্টি করেছে ভাষা সম্পর্কে নতুন, গভীর ও ব্যাপক বোধ; এবং এর প্রভাব পড়েছে মানববিদ্যার অন্যান্য শাখার ওপরও। সংকীর্ণ উপাত্ত বর্ণনার বিমর্ষতা থেকে চোমস্কি উদ্ধার করেন ভাষাবিজ্ঞানকে, এবং মানুষ সম্পর্কে পুনরায় সৃষ্টি করেন ব্যাপক মানবিক বোধ। চোমস্কীয় রূপান্তর ব্যাকরণের আদিকাঠামো এর পর সংশোধিত হয়; এবং তাঁর উত্তরসূরিরা কিছু মৌলিক বিষয়ে দ্বিমত পোষণ ক’রে উদ্ভাবন করেন সৃষ্টিশীল অর্থতত্ত্ব নামক নতুন ব্যাকরণকাঠামো। চার্লস জে ফিলমোর পস্তাব করেন তাঁর রূপান্তরমূলক কারক-ব্যাকরণ কাঠামো। অর্থাৎ ভাষাবিজ্ঞানের আধুনিক পর্ব হচ্ছে বাক্যতত্ত্বের কাল। এ-সময়ে পৃথিবীর বহু ভাষা বর্ণিত-বিশ্লেষিত-ব্যাখ্যাত হয়েছে চোমস্কীয়, সৃষ্টিশীল আর্থতাত্ত্বিক এবং ফিলমোরীয় কারক-ব্যাকরণ কাঠামোতে। বাঙলা ভাষাবিজ্ঞান সব সময়ই কিছুটা পশ্চাৎবর্তী; পাশ্চাত্যের আধুনিক তত্ত্ব-কৌশল আমাদের অঞ্চলে পৌঁছোতে বেশ সময় নেয়। চোমস্কীয় ও ফিলমোরীয় রূপান্তর ব্যাকরণ কাঠামোতে বাঙলা ভাষার বাক্যের এক এলাকা প্রথম বিশ্লেষিত হয়েছিল হুমায়ুন আজাদেরই গবেষণাগ্রন্থ প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙ্গলিতে-১৯৭৩-১৯৭৬ সময়ের মধ্যে। কিন্তু বাঙলা ভাষার ওই তত্ত্ব-কৌশল পরিবেশিত হয়নি। বাক্যতত্ত্ব গ্রন্থেই প্রথম পরিবেশিত হলো রূপান্তর ব্যাকারণের তত্ত্ব ও কৌশল। কিন্তু এ-গ্রন্থ শুধু রূপান্তর ব্যাকরণের তত্ত্বকৌশলবিষয়ক নয়; এতে পেশ করা হয়েছে ভাষাতত্ত্বের প্রধান তিনটি ধারার বাক্য বর্ণনাকৌশলের অনুপুঙ্খ বিবরণ। এ-গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আটটি দীর্ঘ পরিচ্ছেদ : ছটি প্রধান।